সদ্য বিবাহিত জামাই বউদের জন্য উপদেশ। আসলে বর্তমান সমাজে বিবাহ হতে না হতে হতেই যেই হারে বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে, তার জন্য এই উপদেশগুলি অত্যন্ত কার্যকর। যদি কেউ তাদের বিবাহ বা দাম্পত্য জীবন সুখের করতে চান, তাহলে এই পোস্টটি হতে পারে আপনার জীবনের সেরা একটি পোস্ট।
বিয়ের সময় সন্তানের উদ্দেশ্যে পিতার উপদেশঃ
হে আমার আত্মজ, প্রথমেই আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি এ জন্য যে তিনি আমার জীবনটাকে এতটুকু প্রলম্বিত করেছেন যে আমি তোমার বিয়ের রাত দেখতে পাচ্ছি। তুমি তোমার পুরুষত্বের পূর্ণতায় পৌঁছেছো। আজ তুমি তোমার দ্বীনের অর্ধেক পুরো করতে যাচ্ছো।
হ্যাঁ, এখন তুমি সেই জীবন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছো যেখানে তুমি একটি মুক্ত বিহঙ্গের (পাখি) মতো ছিলে। কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়া যাচ্ছে তা-ই করেছো এতোদিন। কোনো চিন্তা ছাড়াই সমুদ্রে গিয়ে লাফিয়ে পড়েছো। সেখান থেকে তুমি যাচ্ছো এখন এক কর্তব্যপরায়ণতা ও পূর্ণতার জগতে।
একজন পিতা সেদিন নিজেকে সুখী মনে করেন যেদিন তিনি নিজের সন্তানকে পুরুষ হয়ে উঠতে দেখেন। তুমি এক নব্য জগতে এবং এক নতুন জীবনে পা রাখতে যাচ্ছো। তাতে অনেক কল্যাণ ও সৌন্দর্য রয়েছে, সুন্দরভাবে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত করতে পারলে তুমি তা দেখতে পাবে। আবার তাতে অনেক অপ্রিয় ও তিক্ত দিক রয়েছে যা তোমার জীবন দুর্বিষহ করে তুলতে পারে।
তাই তোমাকে যথাযথ পরিচালনা ও উত্তরোত্তর উন্নতি করতে শিখতে হবে। আর অবশ্যই তোমাকে জীবন সঙ্গীনি সম্পর্কে নেতিবাচক (নেগেটিভ) ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তুমি দশটি বিষয়ে লক্ষ্য না রাখলে নিজ ঘরে শান্তি পাবে না। নিজের স্ত্রীর জন্য তুমি এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখবে। অতএব কথাগুলো মনে রেখো এবং এসব অর্জনে সচেষ্ট থেকো।
প্রথম ও দ্বিতীয় বিষয়ঃ
স্ত্রী’রা প্রেম ও ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ পছন্দ করে। তারা ভালোবাসার সুস্পষ্ট উচ্চারণ শুনতে চায়। অতএব তোমার স্ত্রী’র সাথে এ ব্যাপারে কার্পণ্য দেখাবে না। এ ব্যাপারে যদি কার্পণ্য করো, তবে তুমি তার ও নিজের মধ্যে নির্দয়তার দেয়াল টেনে দিলে। স্বামী-স্ত্রী’র নির্মল ভালোবাসার ব্যকরণে ভুল করলে।
তৃতীয় বিষয়ঃ
স্ত্রী’রা কঠোর ও অনড় স্বভাবের পুরুষদের অপছন্দ করে, আর দুর্বল ও কোমল চিত্তধারী পুরুষদের ব্যবহার করে। অতএব প্রতিটি গুণকে স্বস্থানে রাখবে। কারণ এটি ভালোবাসা ডেকে আনে এবং প্রশান্তি ত্বরান্বিত করে।
চতুর্থ বিষয়ঃ
মেয়েরা স্বামীর কাছে তা-ই প্রত্যাশা করে যা স্বামীরা স্ত্রীর কাছে যা প্রত্যাশা। যেমনঃ ভদ্রোচিত কথা, সুন্দর চেহারা, পরিচ্ছন্ন বসন ও সুগন্ধি। অতএব তোমার প্রতিটি অবস্থায় এসবের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। স্ত্রী’কে নিজের মতো করে কাছে পেতে তার কাছে এমন অবস্থায় ঘেঁষবে না যখন তোমার শরীর ঘামে জবজবে।
তোমার কাপড় ময়লা। কারণ, তুমি তা করলে যদিও সে তোমার আনুগত্য দেখাবে; কিন্তু তার অন্তরে তুমি এক ধরণের বিতৃষ্ণা তৈরী করে দিলে। ফলে তার শরীররই তোমার ডাকে সাড়া দেবে। তার অন্তর পালিয়ে বেড়াবে তোমার থেকে।
পঞ্চম বিষয়ঃ
ঘর হলো নারীদের রাজত্ব। ঘরের মধ্যে তারা নিজেকে নিজের আসনে (সিংহাসন) সমাসীন ভাবে। নিজেকে সেখানকার নেতা মনে করে। অতএব তার এই সাজানো প্রশান্তির রাজ্যটিকে তুমি তছনছ করতে যাবে না। এ আসন থেকে তাকে নামাবার চেষ্টাও করবে না।
তুমি যদি তা-ই করো, তবে তাকে যেন তার রাজত্ব থেকে উচ্ছেদ করলে। আর কোনো রাজার জন্য তার চেয়ে বড় শত্রু আর কেউ হতে পারে না যে কিন-না তার রাজত্ব নিয়ে টানাটানি করে। যদিও সে প্রকাশ্যে তোমাকে কিছু বলবে না। কিন্তু এতে করে পারষ্পরিক বিশ্বাস ও ভালোবাসার বিশ্বাস দূষিত হবে।
ষষ্ঠ বিষয়ঃ
নারী যেমন চায় তার স্বামীকে পেতে। তেমনি তার পরিবারকেও সে হারাতে চায় না। অতএব তুমি কিন্তু তার পরিবারের সঙ্গে নিজেকে এক পাল্লায় মাপতে যাবে না। যদি এমন চাও যে সে হয়তো তোমার হবে; নয়তো তার পরিবারের। তবে সে যদিও তোমাকেই অগ্রাধিকার দেবে। কিন্তু মনে মনে ঠিকই বিষণ্ণ হবে। যার ভার সে তোমার দৈনন্দিন জীবন পর্যন্ত বয়ে আনবে।
সপ্তম বিষয়ঃ
নিশ্চয় নারীকে সবচে’ বাঁকা হাড় দিয়ে সৃজন করা হয়েছে। এটি তার দোষ নয় বরং তার সৌন্দর্যের রহস্য। তার আকর্ষণের চাবিকাঠি। যেমন ভ্রুর সৌন্দর্য বক্রতায়। অতএব সে কোনো ভুল করলে তার উপর এমন হামলা চালিও না যাতে কোনো সহমর্মিতা নেই। বাঁকাকে সোজা করতে গেলে তুমি তা ভেঙ্গেই ফেলবে।
এ ক্ষেত্রে তা হলো তাকে ‘তালাক্ব’ প্রদান। পক্ষান্তরে ভুলগুলোয় প্রশ্রয় দিলে তবে তার বক্রতা বেড়েই যাবে। সে নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নেবে। ফলে সে তোমার জন্য যেমন নরম হবে না তেমনি শুনবে না তোমার কথা।
অষ্টম বিষয়ঃ
নারীদের সৃষ্টিই করা হয়েছে স্বামীর অকৃতজ্ঞতা এবং উপরকার অস্বীকারের উপাদান দিয়ে। তুমি যদি যুগযুগ ধরে তাদের কারো প্রতি সহৃদয়তা ও সদাচার দেখাও তারপর শুধু একটিবার তার মন্দ ব্যবহার কর তবে সে বলবে, তোমার কাছে আমি জীবনে ভালো কিছুই পেলাম না।
অতএব তাদের এ বৈশিষ্ট্য যেন তোমায় তাকে অপছন্দ বা ঘৃণায় প্ররোচিত না করে। কারণ, তোমার কাছে তার এ বৈশিষ্ট্যটি খারাপ লাগলেও তার অনেক গুণ দেখবে তাকে ভালো লাগার মত।
নবম বিষয়ঃ
নানবিধ শারীরিক দুর্বলতা ও মানসিক ক্লান্তির মাঝ দিয়েই নারী জীবন বয়ে চলে। এ দিকে লক্ষ্য রেখেই আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য কিছু ফরয পর্যন্ত ক্ষমা করে দিয়েছেন যা এ সময় কর্তব্য ছিল। যেমন পিরিয়ড ও সন্তান প্রসবকালে তার জন্য পুরোপুরিভাবে সালাত মাফ করে দিয়েছেন।
এ সময় দুটোয় সিয়াম পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। যতক্ষণ না তার শারীরিক সুস্থতা ফিরে আসে এবং তার মেজাজ স্বাভাবিক হয়ে যায়। অতএব এ সময়গুলোয় তুমি আল্লাহর ও ইবাদতমুখী হয়ে যাবে। কারণ, তার জন্য আল্লাহ যেমন ফরযকে হালকা দিয়েছেন তেমনি তার থেকে তোমার চাহিদা ও নির্দেশও হালকা করে দিয়েছেন।
দশম বিষয়ঃ
মনে রাখবে স্ত্রী কিন্তু তোমার কাছে একজন বন্দিনীর মতো। অতএব তার বন্দিত্বের প্রতি সদয় থাকবে এবং তার দুর্বলতাগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। তাহলে সে হবে তোমার জন্য সর্বোত্তম সম্পদ। সে তোমার সর্বোৎকৃষ্ট সঙ্গী হবে। আল্লাহ তোমার কল্যাণ করুন।
উপদেশ বিষয়ক আর ইসলামিক বই দেখুনঃ
- মুসলিম জাতির প্রতি মহা উপদেশ pdf বই ডাউনলোড
- মহা উপদেশ pdf বই ডাউনলোড
- রাসূল এর ২০০ সোনালী উপদেশ pdf বই ডাউনলোড
- মুখতাসারুল ফাওয়ায়েদ pdf বই ডাউনলোড
- আল ফিরাসাত pdf বই ডাউনলোড
বিয়ের রাতে বিদায়ী মেয়ের প্রতি মা’ এর উপদেশঃ
আদরের নন্দিনী মেয়েকে চিরতরে একজনের কাছে তুলে দিতে একজন মায়ের কী কষ্ট লাগে, মমতাময়ী মায়ের তখন কী আবেগের ঢেউ খেলে, তাঁর চোখে তখন কত আনন্দ-বেদনার ভাবনা ভীড় করে তা একমাত্র ঐ মা জননীই জানেন।
কিন্তু শুধু চোখের পানি ফেলে কলিজার টুকরো মেয়েকে শুধু বিদায় জানানোই নয়, তখন তাকে এমন উপদেশ শুনিয়ে দেয়া যায় যা তাঁর সারা জীবনে সম্বল হবে, যা তাঁর আগামীর দিনগুলোকে উজ্জ্বল সুখময় করবে তা বড্ড ভালো হয়।
হে আমার মেয়ে, তুমি তোমার পিত্রালয় ছেড়ে যাচ্ছো। যেখানে তুমি জন্মেছিলে। যে বাসস্থানে তুমি প্রতিপালিত হয়েছো। এখন যাচ্ছো এমন পরিবেশে যার সঙ্গে তুমি মোটেও পরিচিত নও। মিলিত হবে এমন সঙ্গীদের সঙ্গে যাদের তুমি চেনোনা।
অতএব, “তুমি তার ‘দাসী’ হয়ে যাও। সে তোমার ‘দাস’ হয়ে যাবে।” আর তার জন্য তুমি দশটি বৈশিষ্ট্য ধারণ করো, তবে সে তোমার জন্য সঞ্চিত ধন হয়ে যাবে।
প্রথম ও দ্বিতীয় বিষয়ঃ
স্বামীর সঙ্গে থাকবে অল্পতে তুষ্টির সঙ্গে। জীবনযাপন করবে আনুগত্য ও মান্যতার ভেতর দিয়ে।
তৃতীয় ও চতুর্থ বিষয়ঃ
স্বামীর নজরে পড়ার জায়গাগুলো দেখাশোনা করবে। তার নাকে লাগার স্থানগুলো খুঁজে ফিরবে। তার দুই চোখ যেন তোমার কুৎসিত কিছুর প্রতি পতিত না হয়। আর সুবাস ছাড়া তোমার কাছে যেনো কোন গন্ধ না পায়। সুপ্রসিদ্ধ সুন্দরের সর্বোত্তম হলো চোখের সুরমা। আর পবিত্র সুবাসগুলোর আদি ও সেরা হলো সাবান ও পানি।
পঞ্চম ও ষষ্ঠ বিষয়ঃ
স্বামীকে খাওয়াবার সুযোগ তালাশ করবে। তাঁর নিদ্রার সময় নিরব থাকবে। কারণ, ক্ষুধার তাপ মানুষকে তাঁতিয়ে দেয়। আর ঘুম থেকে কেঁপে ওঠা তাকে ক্ষেপিয়ে দেয়।
সপ্তম ও অষ্টম বিষয়ঃ
স্বামীর বাসা ও সম্পদের যত্ন নেবে। তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রতি লক্ষ্য রাখবে।
নবম ও দশম বিষয়ঃ
তাঁর কোন নির্দেশ অমান্য করবে না। তাঁর কোন দোষ খুঁজে বের করবে না। কারণ, তুমি তাঁর নির্দেশের অবাধ্য হওয়ার অর্থ তাঁর মনটাকে চটিয়ে দেওয়া। যদি তাঁর কোনো দোষ প্রকাশ করলে তো তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করায় অনিরাপদ হয়ে গেলে। এরপর আরও মনে রাখবে, তাঁর বিষন্নতার সময় আনন্দ প্রকাশ করবে না।
আবার তাঁর আনন্দের সময় বিষণ্ণতা প্রকাশ করবে না। কারণ প্রথমটি তাঁর কাছে অবহেলা মনে হবে এবং দ্বিতীয়টি তাকে বিরক্ত করবে। তাকে সবচে’ মর্যাদা তুমি তখনই দেবে যখন তাকে সবচে’ বেশি সম্মান করবে। আর জীবনের সকল কাজে সব কিছুর আগে তাকে প্রাধান্য দেবে।
আর এ অবস্থায় তুমি সে পর্যন্ত পৌঁছুতে পারবে না যে যাবৎ না তোমার পছন্দ বা অপছন্দের বিষয়ে তাঁর সন্তুষ্টিকে তোমার সন্তুষ্টির উপর এবং তাঁর চাওয়াকে তোমার চাওয়ার উপর অগ্রাধিকার না দাও। অবশেষে প্রার্থনা, আল্লাহ তোমার সার্বিক কল্যাণ করুন। তোমার দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করুন।